শ্রাবণের কান্নার মাঝে জন্মেছিলাম আমি
সেদিন আমারও চোখে জল ছিল।
কেন সে জল?
অশান্ত পৃথিবীর বৈরি বাতাস এসে
কানে কানে বলেছিল অশুভ সমাজের কটুক্তি।
পৃথিবীর সব শিশুর কান্নার ভাষা এক।
হোক সে হিন্দু মুসলিম কিংবা বৌদ্ধ খৃস্টান।
এই কান্নাতে নেই ব্যবধান।
ভূমিষ্ঠ শিশুর কান্নার ভাষা হুঁয়া হুঁয়া
আমি আসবো না আমি আসবো না।
অথচ তাকে আসতে হয় বিধাতার অনুপ্রেরণায়।
নিষ্পাপ শিশু কালান্তে সমাজ থেকে অনিয়ম, হানাহানি, মিথ্যাচার কুসংস্কারে লালিত হয়ে জীবনকে দুঃখময় করে তুলে।
সময়ের কাছে মানুষ হয় পরাজিত।
সকল কুসংস্কারের বিপরীতে
আমরণ সংগ্রাম আমার-
আমি সুন্দর কে খুঁজেছি সুন্দর দিয়ে
অসুন্দরের মস্তিষ্কে নিক্ষেপ করেছি বারুদ।
অসুন্দরের বিরুদ্ধে আঘাত হেনেছি ঝড়ের ক্ষিপ্রতায়।
এই আমার প্রত্যাশা এই আমার প্রতিজ্ঞা।
যখন আমি থাকবো না-
পৃথিবীর কীতিগর্বিত বাগানে, ফুলের জলশায় কবিদের আড্ডায়, কবিতার আসরে।
কুসংস্কার সমাজ ছেদ করে
ফোটানো ফুলের মতো
নিজেকে জাগিয়ে পবিত্র সৌরভে।
অন্ধকারের বক্ষ ছিঁড়ে, কেউ জ্বালাবে না অনির্বাণ শিখা কিংবা যে শিখায় লেখা হবে না কোন কবিতা ও গান।
ঝিগলি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক মঞ্চে-
কোন কিশোরীর বুকে খুঁজে নিও আমাকে
আমার একটা কবিতা না হয় সামান্য স্মৃতি
আবৃত্তির মঞ্চে বক্ষ ফেঁটে বেরিয়ে আসবে।
তখন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ধ্বনিত হবে
আমার কবিতা আমার গান।
দেখবে হয়তো সেদিনের মতো
কবিতার ছন্দ – মহানন্দে গাঁয়ের মেঠোপথে
হতাশা গ্রস্থ কোন যুবকের অন্তরে
বন্ধু হয়ে বেঁচে আছি আমি।
আমার গান কিংবা কবিতায়।
কৃতিগর্বিত বুকে, স্মৃতির পাতায় প্রীতি ডোরে।
এমন দিনে হয়তো আমার লেখা তখন কার মতো অনাদর আর অবহেলায় উলঙ্গ শিশুর ন্যায়
ধুলোয় লুটবে না।
স্থান পাবে আপনাদের বক্ষদ্বারে,
আপনাদের হৃদয়ে এবং বিদ্যানিকেতনের কোন এক আবৃত্তির মঞ্চে।
আজকের কবিতার বিচারক হবেন আমার গুরু।
একদিন যিনি প্রতিহিংসার ছাই ছিটিয়েছিলেন।
আজ হয়তো তিনি চোখ ভর্তি জল ফেলে করতালি বাজাবেন মহানন্দে।
বর্ষের শেষ সূর্য টা যেমন অস্তাচলে হারিয়ে গেল,
আমিও ঠিক এমনি একদিন মৃত্যুর দরজা দিয়ে পালিয়ে যাব দূরে বহু দূরে।
বন্ধু নূর হয়তো আলো জ্বালিয়ে পড়বে আমার লেখাটুকু আনন্দে।
মাহবুব, লোকমান, শামীমা শারমীন
এমরান রাতদিন আমাকে ভাববে।
যাদের হাতে তুলে দেয়া হবেনা
নতুন কোন কবিতা ও গান।
ঝিনুকের অন্তরে মুক্তা হয়ে চির জাগ্রত থাকবো আমি।-
আহবান- পতাকার কথা অথবা লেলিহান শিখায়।
বারুদের অন্তরে জল ঢালবে না কেউ।
অগ্নিশিখার শিখায় বিস্ফোরিত হবে বারুদ –
নীতির প্রশ্নে অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
শব্দসিঁড়ির সিঁড়ি আর আকাশমুখী হবে না।
মন ছুঁয়েছে মন এর লেখা
কাগজ টুকু হারিয়ে যাবে হয়তো।
ভেঙে যাবে কলমি লতা, কদম ফুল
কিংবা উৎসবের দেয়ালিকা।
বর্ষবরণ করতে বৃক্ষ তলে বাজবে না সানাই
সংস্কৃত সন্ধ্যা হবে আমিবিহীন বৃক্ষতলে।
প্রতি বৃহস্পতিবারে রজনী গভীরে
নয়া স্যারের ডাক বাংলায় জমে উঠবে না কবিতার আসর।
থেমে যাবে সকল সংগীতের সুর।
বক্ষমুক্ত কল্লোলে সুর বিহীন পরে থাকবেন
আমার সুর সাধক গুরু
আমার নয়া স্যার।
ফজলুল হক স্যারের অসম্ভব পাহারায়
আমার শব্দের মিছিল।
আমি জেগে উঠেছিলাম –
নজরুল শামীমের নজমুলের জাগরনী গানে
গ্রাম বাংলার পল্লীকথায়।
রুহুল আমিন স্যারের কলম মেরামতে
চালাই শব্দের চাষ।
আসাদুজ্জামান স্যারের বিপ্লবী চেতনায়
আরও উজ্জ্বীবিত হই কলমের জয়গানে।
মনে প্রাণে আপনারা যারা আমাকে স্নেহ করতেন,
ভালবাসতেন শব্দের মহিমায়।
আমিবিহীন আমার লেখাটুকু হয়তো আদর পাবে –
আপনাদের অন্তরে, আপনাদের বক্ষগৃহে।
যখন আমি থাকবোনা- আমাকে নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হবে।
এই সমালোচনার দিনে আমার অপ্রকাশিত একটি কবিতা পাঠ কর।
যে কবিতায় বেঁচে আছি আমি।
আমি কবি নই ! কবিতা ছিল আমার অন্তরে।
আমার প্রাণে প্রাণের স্পন্দনে অন্তরের কথা গুলো লিখেছিলাম বলে কবি হয়েছিলাম হয়তো!
ঠিক কবি নয় আপনাদের বন্ধু
আপনাদের ভাই- আপনাদেরই সন্তান।
আপনাদের মতো আমি ও একদিন
এই রত্না সেতু পাড়ি দিয়ে অনেক দুর গিয়েছি।
কারণে অকারণে মুন্সী ভাই, সাব্বির, লুৎফুর শহীদকে নিয়ে সেতু বক্ষে গল্প করেছি কত।
আজ আমি হীন তুমি আছ।
গাছ গাছালি, নদী-ফুল-পাখি সব আছে-
কিন্তু নেই শুধু আমি।
আমার আঙিনায় নীড়হারা পাখির মতো
নীশি জেগে কেউ বেদনার সুর বাজাবে না।
যখন আমি থাকব না- কথা বলিবার তরে, অনুনয় করিবেনা কেউ।
দেখিবে না স্বপন আপন মনে রাতের গভীরে।
জাগাবে না কাহারে শীতল ছোঁয়ায় দুটি হাত ধরে।
জড়াবে না মালা অলখ খোঁপায়।
দুলিবে না কমল নিশীত চুলে
দখিনা বাতাসে।
ভালবেসে বাজিবে না বাঁশি
বাতায়ন খুলে শুন্য ধরাতলে।
প্রতীক্ষায় আর কেহ থাকিবে না বসি।
নিস্তব্ধ দুপুরে, মনের পুকুরে করিবে না কাহারে
কোন জ্বালাতন।
ঝোঁপের আড়ালে বিরহী পাখি
পিয়া পিয়া বলে উঠিবেনা ডাকি, শুনিবেনা রোদন ক্ষুধাতুর ভিখারির স্বরে।
কারো ঘুম ভাঙ্গাবেনা ক্ষুধাতুর- প্রেম ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে।
কবিঃ গ্রামঃ ঝিগলী, ছাতক, সুনামগঞ্জ, মোবাঃ 01717-353561